তৈরির উপকরনঃ
১. দুধের সর- ৫ কেজি পরিমাণ
২. ঠাণ্ডা পানি- ২.৫ লিটার
৩. মাটির পাত্র বা মালশা- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য)
৪. শিল-পাটা- (সর বাটার জন্য)
৫. কাঠের চামচ বা খুন্তি- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য)
প্রস্তুত প্রনালিঃ
১. প্রথমে দুধের সর নিয়ে নিন আর দুধের সর বাটার জন্য
একটি পরিষ্কার শিল-পাটা নিন। এরপরে দুধের সর অল্প পরিমাণে করে শিল-পাটাতে নিয়ে
বাটতে থাকুন। বাটার সময় পানি দেয়া যাবেনা। সরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই একবারে
সবটুকু একসাথে বাটতে যাবেন না। অল্প অল্প করে সর নিয়ে বেটে নিতে হবে।
২. এবার একটি মাটির পাত্র বা মালশা নিয়ে নিন। তাতে
বাটা সর থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে কাঠের চামচ বা খুন্তি দিয়ে ঘুটতে থাকুন। এই প্রক্রিয়াটি
যত দ্রুত সম্ভব ততো দ্রুত করতে হবে।
৩. ভাল করে ঘুটা হয়ে গেলে সর থেকে ক্রিম তৈরি হবে।
এভাবে বাকি সর থেকেই ক্রিম তৈরি করে নিন।
৪. ক্রিম তৈরি হয়ে গেলে এর মধ্যে ঠাণ্ডা পানি দিতে
হবে। ক্রিমের পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিতে হবে।পানি দিয়ে ঘুঁটার পরে ক্রিম থেকে
সাদা দুধের মত পানি বের হয়ে ক্রিম পরিষ্কার হয়ে ঘন ডো এর মত উপরে ভেসে উঠতে
থাকবে। যখন ক্রিমের সবটুকু ডো পরিষ্কার হয়ে পানির উপরে উঠে আসবে তখন পানি থেকে
ক্রিম ছেকে তুলে নিন এবং পানি ফেলে দিন। একবারে করা সম্ভব না হলে কয়েকবারে করতে
হবে।
৫. এবার সবটুকু ক্রিমের ডো একটি পাতলা মসলিন কাপড়ের
মাঝখানে রেখে ভাল করে বেধে ঝুলিয়ে দিন। এভাবে ঝুলিয়ে রাখলে ক্রিমের ডো থেকে
সম্পূর্ণ পানি বের হয়ে যাবে। এভাবে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘণ্টা রাখতে হবে।
৬. ক্রিমের ডো থেকে সম্পূর্ণ পানি বের হয়ে গেলে একটি
লোহার কড়াই চুলায় দিয়ে গরম
করে নিন। খেয়াল রাখবেন যেই পাত্রে ঘি তৈরি হবে তা যেন
সম্পূর্ণরুপে পরিষ্কার থাকে।
৭. এবার গরম পাত্রে ক্রিমের ডো ঢেলে দিন। ডো দেয়ার পরে
চুলার আঁচ কমিয়ে মধ্যম আঁচে রাখুন। ক্রিম চুলায় দেয়ার পরে অনবরত নাড়তে থাকুন।
বেশ কিছুক্ষন নাড়ার পরে ক্রিম জ্বাল হয়ে তার মধ্যে থেকে তেল বের হতে থাকবে। এই
তেলটাই হল আপনার কাঙ্ক্ষিত ঘি। তবে এখনও সম্পূর্ণরুপে ঘি তৈরি হইনি কিন্তু। সবটুকু
ক্রিম যখন পুড়ে গিয়ে কালো হয়ে যাবে সেই সাথে ঘি গাড় হয়ে সুন্দর সোনালি রং
ধারন করবে ও তা থেকে সুন্দর সুগন্ধ ছড়াবে তখন বুঝতে হবে এবার আপনার ঘি তৈরি হয়ে
গেছে।
৮. এবার একটি পরিষ্কার ও শুকনা পাত্রে ঘি ছেঁকে নিতে
হবে। ছাকার সময় খেয়াল রাখবেন পোড়া অংশ যেন ঘিয়ের মাঝে চলে না যায়।
৯. পাত্রের ঘি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে বোতলে ভোরে ফেলুন এবং
ফ্রিজারে করে সংরক্ষন করুন। এভাবে সংরক্ষন করলে আপনার বানানো ঘি অনেকদিন পর্যন্ত
ঠিক থাকবে।
আপনার সর ঘুঁটানো ও ক্রিম জ্বাল দেয়ার উপরে নির্ভর
করবে আপনি কতখানি ঘি তৈরি করতে পারবেন। তবে ৫ কেজি দুধের সর থেকে ১ থেকে দেড় কেজি
মত ঘি তৈরি করা সম্ভব।
সতর্কতাঃ ঘি প্রস্তুত করার আগে খেয়াল রাখবেন সর
শিল-পাটাতেই বাটতে হবে। ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করতে পারেন, তবে তা বাটা সরের মত মোলায়েম হবেনা। সেই সাথে মাটির পাত্রই ব্যাবহার
করবেন। স্টিল বা অন্যান্য তৈজসপত্র ব্যাবহার করলে ক্রিম নষ্ট যেতে পারে। সেই সাথে
পানি ছেকে নিতে হবে ভাল করে যেন কড়াইতে দেয়ার সময় পানি না থাকে ক্রিমের মধ্যে
একটুও। ঘি আমাদের দেশি রান্নায় সেই সাথে যেকোনো বাহারি খাবারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ
একটি উপাদান। ঘি এর মান ভাল হলে রান্নার স্বাদ এমনিতেই অনেক ভাল হয়ে যায়। তবে এই
ঘি তৈরির প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। ঘি তৈরির আগে খেয়াল রাখবেন এটা তৈরি করার জন্য
অনেক সময় ও শক্তি আপনাকে দিতে হবে এর পিছনে। কিন্তু সব কষ্ট শেষে যখন নিজের হাতে
তৈরি ঘি এর স্বাদ গ্রহন করবেন তখন আপনার সব কষ্ট সফল হয়ে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন